বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে বাড়ছে মরুভূমির ত্বীন ফলের চাষ

মো. হাবিবুর রহমান

ত্বীন মূলত মরুভূমির সুস্বাদু ফল। এ ফলের স্বাদ হালকা মিষ্টি। এটি দেখতে কিছুটা ডুমুর ফলের মতো। বাংলাদেশে ত্বীন ফল ড্রাই ফ্রুটস হিসেবে আমদানি করা হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের আনাচে-কানাচে চাষ শুরু হওয়ায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

ত্বীন ফল মরুভূমিতে চাষ হলেও গত এক দশকের বেশি সময় থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ শুরু হয়েছে। আমাদের দেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে।

কোরআন শরীফে বিভিন্ন ফল-মূল ও ফসলের বর্ণনা রয়েছে। যা মানব জাতির জন্য সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এক বড় উপহার ও জীবন নির্বাহের অন্যতম পাথেয়। ত্বীন ফলের নামে কোরআন শরীফের ত্রিশতম অনুচ্ছেদে ‘ত্বীন’ নামে একটি সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

ত্বীন ফল নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। ত্বীন ফলের গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ফল দেওয়ার হারও বৃদ্ধি পায়। কৃষিবিদদের মতে, ত্বীন ফলের গাছে প্রথম বছরে ফল দেওয়ার হার ১ কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি। এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। ত্বীন ফলের গাছের আয়ু সাধারণত প্রায় একশ বছর। তবে অবস্থা ও জাত ভেদে এ পরিসংখ্যানের তারতম্য হয়। বাংলাদেশে ফলটি ত্বীন নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ যথাক্রমে মিশর, তুরস্ক, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং জর্দানে ‘আঞ্জির’ নামে পরিচিত।

ঢাকার গাজীপুরেও ত্বীন ফলের চাষ করা হয়। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে ‘মডার্ন এগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নিউট্রিশন’ নামের একটি ফার্মে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়। ফার্মটির প্রতিষ্ঠাতা মো. আজম তালুকদার ২০১৪ ও ২০১৫ সালের দিকে থাইল্যান্ড থেকে গাছ নিয়ে আসেন।

এ ছাড়াও তিনি তুরস্ক থেকে গাছের কাটিং সংগ্রহ করেন। পরে ২০১৭ সালে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রোপাগেশন সেন্টারে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রেখে বারতোপা নামক স্থানে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন চারার গাছ উৎপাদন শুরু করেন। ফার্মটি আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহৎ ত্বীন এগ্রো ফার্ম হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রায় সাত বিঘা জমিজুড়ে চাষ করা হয়। এ ফার্ম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় সবচেয়ে বেশি চারা গাছ ও ফল বিক্রি করা হয়। শ্রীপুরের এ ফার্ম থেকে উদ্যোক্তা ও চাষিরা চারা গাছ তাদের ফার্মের জন্য নিয়ে যান। ফার্মের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এ ফার্ম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত ত্বীন ফল বিক্রি করা হয়।

রংপুর বিভাগেও ত্বীন ফলের চাষ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে ত্বীন ফলের চাষ এ অঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা শাল্টি গোপালপুরের চৌপথী বাজারের সাথে ত্বীন ফলের বাগান আছে।

jagonews24

মূলত মিঠাপুকুর-ফুলবাড়িয়া মহাসড়কের মাঝে মুসলিম বাজার থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে ত্বীন এগ্রো ফার্মটি দেখা যাবে। এ বাগানের জন্য ত্বীন ফলের চারা গাছ ঢাকার গাজীপুর থেকে আনা হয়েছিল। এগ্রো ফার্মটি প্রায় এক বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ৩০০ গাছ এখানে আছে।

খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ত্বীন ফলের চাষ করা হয়। সাতক্ষীরায় ছাদবাগানেও ত্বীন ফলের চাষ হয়। সাতক্ষীরা শহরের কাটিস সরকার পাড়ায় একটি ফার্ম আছে। ত্বীন চাষি মো. আসিফুর রহমান তার বাগান শুরু করেন মিশরের এক বন্ধু থেকে গাছ এনে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী, বগুড়া ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ত্বীন ফলের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

প্রতিটি ত্বীন ফলের বাগানে চাষি সাধারণত দুই ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রথমত চারা গাছ বিক্রি করেন। দ্বিতীয়ত ফল বিক্রি করেন। সাধারণত ত্বীন গাছ নির্দিষ্ট পরিমাণ বড় হলে ফল দেয়। পরে ফল দেওয়া শেষ হলে গাছ ছাঁটাই করে ফেলা হয়। অধিকাংশ ফল চাষি চাষের পাশাপাশি গুটি কলম করেন। এখানেই গাছের কলম দিয়ে চারা গাছের সংখ্যা বাড়ানো হয়। প্রতিটি চারা গাছের দাম তার আকার ও কেনার পরিমাণের উপর নির্ধারিত হয়। প্রতি কেজি পাকা ত্বীন ফলের দাম হাজার টাকার বেশি হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে পাইকারি এবং গাছের পরিমাণ বাড়ানোর উপর দামের পার্থক্য হয়।

সাধারণত গুটি কলম থেকে ত্বীন ফলের চারা গাছ উৎপাদন করা হয়। মূল গাছ থেকে গুটি কলম তৈরি করা হয়। গুটি কলমের পর তিন মাস সময় অতিক্রম হলে ফল দেওয়া শুরু হয়। অঞ্চলভেদে ত্বীন চারা গাছের দামে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। রংপুরে একটি ত্বীন গাছের দাম ৫০০-৬০০ টাকা। আর কেউ বাগান করতে চাইলে প্রতিটি ত্বীন ফলের গাছের দাম ৩০০-৩৫০ টাকা। অন্যদিকে গাজীপুরের ফার্মে দুই মাস বয়সী চারা গাছ পাইকারি ৫২০-৭২০ টাকা বিক্রি হয়।

ত্বীন গাছে ফল ধরার এক সপ্তাহের মধ্যে তা খাওয়ার উপযোগী হয়। একটা ফলের ওজন সাধারণত ১০০ গ্রাম হয়। অন্যদিকে একটি গাছে এক রাউন্ডে ৫ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। প্রতিটি গাছে বিভিন্ন সময়ে কমপক্ষে সত্তর থেকে আশিটি ফল ধরে। প্রায় বছরব্যাপী নির্দিষ্ট সময় পর পর ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ৬ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

আবার কারো কারো মতে, ত্বীন ফলের জাত অনুযায়ী ৮-১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে এ ফল পাকতে শুরু করে। ত্বীন ফল পাকতে শুরু করলে ফলের রং ক্রমান্বয়ে লাল, খয়েরি, গোলাপি ও হলুদ আকার ধারণ করে। পরিপূর্ণ পাকলে তা রসে ঠাসা ও মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয়। সাধারণত গাছে ত্বীন ফলটি পাকলে বেশিদিন রাখা যায় না। গাছ থেকে তাজা তাজা সংগ্রহ করে তা খেতে খুব সুস্বাদু লাগে। সে জন্য গাছে পাকলে চাষি তা সংরক্ষণের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন এবং বাজারজাত করেন।

সাধারণত উঁচু মাটিতে, বাড়ির আঙিনায় এবং ভবনের ছাদে ত্বীন ফল চাষ করা যায়। অনেকে শখের বশে ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ফল গাছটি চাষ করার জন্য মাটিতে জৈব ও কমপোস্ট সার মেশানো হয়। রোদ পড়ে এমন স্থানে এ ফল চাষ করা ভালো। গাছের পরিচর্যা হিসেবে সপ্তাহে ২ দিন স্প্রে করা হয়। গাছে গোবর, সার ও পরিমিত পানি দিতে হয়।

মাঝেমাঝে কৃষিবিদদের পরামর্শক্রমে কীটনাশক ব্যবহার করা ভালো। ফার্মের উপর আলাদা নেট বা জাল ব্যবহার করা হয়, যাতে পশু-পাখি থেকে গাছ ও ফলকে রক্ষা করা যায়। গাছে কোনো শুকনা পাতা ও ঢাল থাকলে, তা কেটে ফেলে দিতে হয়। বাসার ছাদে রোদ পড়ে এমন স্থানে ত্বীন ফল উৎপাদন করা যায়। বছরব্যাপী এ ফল উৎপাদন করা গেলেও শীত ও বর্ষা মৌসুমে এর ফলন কিছুটা কম হয়। গ্রীষ্মকালে ত্বীন ফলের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়।

লেখক: কবি ও কলামিস্ট

শেয়ার করুন

২০২২ © ডেইলি কালের ধব্বনি কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।
Design & Developed by Marshal Host 
akun pro jepang
akun pro rusia
akun pro thailand
akun pro kamboja
akun pro china
akun pro taiwan
akun pro hongkong
akun pro myanmar
akun pro vietnam
akun pro malaysia
link server internasional
link server internasional
link server internasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg soft
link server internasional
link server sensasional
pg slot